সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:৪৫ অপরাহ্ন

হাসপাতালেও পেলেন না অক্সিজেন, ছটফট করে মারা গেলেন রানু

হাসপাতালেও পেলেন না অক্সিজেন, ছটফট করে মারা গেলেন রানু

স্বদেশ ডেস্ক:

বরিশাল নগরের পলাশপুর এলাকার বাসিন্দা রানু বেগমের (৫০) তীব্র শ্বাসকষ্ট শুরু হয় আজ মঙ্গলবার বেলা ২টার দিকে। স্বজনেরা দ্রুত তাকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে আনেন। হাসপাতালে আনার পর ভর্তিপ্রক্রিয়া শেষ করতে গিয়ে আড়াইটা বেজে যায়। সময় যত যায়, রানু বেগমের শ্বাসকষ্ট আরও বাড়তে থাকে। করোনা ওয়ার্ডে নেওয়ার পর চিকিৎসক দ্রুত তাকে কৃত্রিম অক্সিজেন দিতে বলেন।

রানু বেগমের ছেলে আল আমিন ও দেবরের ছেলে মাইনুল দ্রুত অক্সিজেনের জন্য ছুটে যান ইউনিটের দোতলায় ওয়ার্ড মাস্টারের কক্ষে। ওয়ার্ড মাস্টারের কক্ষে গেলে তিনি আবার পাঠান তিন তলায় নার্সের কক্ষে। আল আমিন পাগলের মতো ছুটে যান নার্সের কক্ষে। সেখানে গিয়ে অক্সিজেনের কথা বললে কর্তব্যরত নার্স তাকে পুনরায় ওয়ার্ড মাস্টারের কাছে যেতে বলেন। আবার তারা ছুটে যান ওয়ার্ড মাস্টারের কাছে। ওয়ার্ড মাস্টার এবার বিরক্ত হয়ে তাদের ধমকান। হাসপাতালের যেখান থেকে অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়, সেখানে যেতে বলেন। সেখানে গিয়ে আল আমিন ও মাইনুল দেখেন দীর্ঘ লাইন। তারা সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারীকে বলেন, তাদের রোগীর অবস্থা খুব খারাপ। ওই কর্মচারী তাদের লাইনে দাঁড়াতে বলেন। এরপরও সিলিন্ডারের জন্য আকুতি করতে থাকলে ওই কর্মচারী আল আমিন ও মাইনুল অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করেন।

নিরুপায় হয়ে রানু বেগমের ছেলে-ভাতিজা সেখানে অপেক্ষা করতে থাকেন। এদিকে সময় গড়াতে থাকে। আল আমিন কখনো দৌড়ে মায়ের কাছে, আবার কখনো সিলিন্ডারের কাছে ছুটে আসেন পাগলের মতো। রানু বেগম তখন তীব্র শ্বাসকষ্টে ছটফট করছিলেন। তীব্র কষ্টে তার চোখ বেয়ে পানি পড়ছিল। পৌনে ৫টার দিকে আল আমিন ও মাইনুল একটি সিলিন্ডার পান। কিন্তু ততক্ষণে রানু বেগম নিস্তেজ হয়ে গেছেন। চিরতরে থেমে যায় রানু বেগমের হৃৎস্পন্দন।

রানু বেগম বরিশাল নগরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পলাশপুর নতুন ব্রিজ এলাকার বাসিন্দা আবদুল জলিলের স্ত্রী। ভাতিজা মাইনুল জানান, তার চাচির এত দিন জ্বর থাকলেও আজ সকাল থেকে শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। বেলা ২টার দিকে তাকে হাসপাতালে নিয়ে এলে সেখান থেকে করোনা ইউনিটে ভর্তি করাতে বলা হয়। পরে ভর্তি করা হলে চিকিৎসক অক্সিজেন দিতে বলেন। কিন্তু অক্সিজেন পাননি তারা। সেখানে দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবহেলা, উদাসীনতা আর দুর্ব্যবহার তাদের স্তম্ভিত করেছে বলে জানান।

রানু বেগমের ছেলে আল আমিন মায়ের মৃত্যুর পর কাঁদছিলেন। তিনি বলেন, ‘আম্মাকে বাঁচানো গেল না। এখানে মানুষ কেন আসে? হাসপাতালে আনার পর তিন ঘণ্টা একটা অক্সিজেন সিলিন্ডারের জন্য পাগলের মতো হন্যে হয়ে ঘুরেছি। আমাদের তা দেওয়া হয়নি। ট্রলিতে মাকে তোলার জন্য আমাদের কাছে ১৫০ টাকা দাবি করা হয়েছে। টাকা ছাড়া এখানে অক্সিজেন মেলে না। এখানে নিয়ে আসার পরে একজন ডাক্তার, নার্স কেউ কাছে আসেননি। ছটফট করতে করতে অক্সিজেনের অভাবে মা মারা গেছেন। সঠিক সময়ে অক্সিজেন আর চিকিৎসা পেলে আমার মা মারা যেতেন না।’

এ সময় রানু বেগমের আরও দুই স্বজন অভিযোগ করেন, হাসপাতাল সরকারি হলেও এখানে টাকা ছাড়া কোনো চিকিৎসা পাওয়া যায় না। একটি সিন্ডিকেট করে মানুষের অসহায়ত্বকে জিম্মি করে টাকা আদায় করছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে করোনা ওয়ার্ডের ওয়ার্ড মাস্টার মশিউর রহমান জানান, তিনি কোনো রোগীর স্বজনকে গালিগালাজ করেননি। তা ছাড়া অক্সিজেনে দেওয়ার এখতিয়ার তার নেই। অক্সিজেন দিয়ে থাকেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নার্সরা।

করোনা ওয়ার্ডের ইনচার্জ ও হাসপাতালের সহকারী পরিচালক মনিরুজ্জামান শাহীন বলেন, ‘করোনা ইউনিট থেকে অক্সিজেন দেওয়া হবে না, এমন হওয়ার কথা নয়। বিষয়টি আমার জানা নেই। আসলে কী ঘটেছিল, আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।’

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877